জনসংহতি সমিতির শান্তিবাহিনী ও নও মুসলিম ওমর ফারুক ত্রিপুরা
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
পাহাড়ের স্বাধীনতা ও স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে সন্তু লারমার ভাই এমএম লারমার নেতৃত্বে ১৯৭২ সালে গঠিত হয় জনসংহতি সমিতি জেএসএস। ১৯৮২ সালের ১০ নভেম্বর অন্তর্দলীয় কোন্দলে নিহত হবার পূর্ব পর্যন্ত মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বা এমএম লারমা জনসংহতি সমিতি ও শান্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দেন। এরপর সংগঠনটির নেতৃত্বে আসে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা বা সন্তু লারমা।
জনসংহতি সমিতির সদর দপ্তর ছিল বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার দুর্গম অরণ্যে। সন্তু লারমার নেতৃত্বে ১৯৭৩ সালে গোপনে গঠন করা হয় জনসংহতি সমিতি জেএসএস এর সামরিক শাখা সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন শান্তিবাহিনী এবং সশস্ত্র সংগ্রামের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭৪ সাল নাগাদ বিপুল সংখ্যক পাহাড়িদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে শান্তিবাহিনীভুক্ত করা হয়। নিয়মিত বাহিনী ছাড়াও সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের নিয়ে মিলিশিয়া বাহিনী গঠিত হয়। শান্তিবাহিনী ও মিলিশিয়া বাহিনীকে সহায়তার লক্ষ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত এবং বহুসংখ্যক যুব সমিতি ও মহিলা সমিতি গড়ে তোলা হয়। ১৯৭৫ সালে সন্তু লারমা আত্মগোপনে চলে যায় এবং সেই বছরের ২৬ অক্টোবর তিনি গ্রেফতার হন।
সামগ্রিক প্রস্ত্ততি গ্রহণ শেষে শান্তিবাহিনী ১৯৭৬ সালের প্রথমদিকে সশস্ত্র তৎপরতা শুরু করে।
একই বছর বরকলে টহল পুলিশের ওপর হামলার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে এই সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন। ঘটনাটি ছিলো বরকলের ভূষণছড়ায়। একরাতেই চারশ জন বাঙালিকে হত্যার ঘটনা। একই সময় জাতিগত জিঘাংসায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত এক হাজার সাধারণ পাহাড়ি মানুষ।
শান্তিবাহিনী পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী বাঙালিদের আক্রমণ ও হত্যা, নিরাপত্তা বাহিনীকে আক্রমণ, তাদের মতাদর্শ বিরোধী উপজাতীয়দের হত্যা, সরকারি সম্পদের ক্ষতিসাধন, অপহরণ ও বলপূর্বক চাঁদা আদায়সহ বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ জোরদার করে।
সংগঠনটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য বিশ্বস্ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব না থাকায় সশন্ত্র আন্দোলন এক পর্যায়ে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। শান্তিবাহিনীর অব্যাহত সশস্ত্র হামলার মধ্যেই তৎকালীন সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার তৎপরতাকে রুখতে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই সমতল থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভূমিহীন এবং দরিদ্র বাঙালিকে পুনর্বাসন করেন পাহাড়ে। এতে বিচ্ছিন্নতার প্রবণতা কমলেও জটিল আকার ধারণ করে ভূমিবিরোধ। নতুন সমস্যা হিসেবে সামনে আসে ভূমিবিরোধ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশাল ভূখণ্ড হলেও এখানে বসবাস এবং চাষ উপযোগী জমির পরিমাণ কম। তার ওপর ১৯৬০ সালে নির্মিত কাপ্তাই বাঁধের কারণে প্রায় এক লাখ একর ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় ব্যবহারযোগ্য ভূমির পরিমাণ আরও কমেছে। ফলে নতুন করে পুনর্বাসন পাহাড়ে জটিলতা বাড়ায়, বাড়ে মানবিক সঙ্কটও।
সেইসঙ্গে শান্তিবাহিনীর একের পর এক হামলায় প্রাণ হারাতে থাকেন দারিদ্র্য পুনর্বাসিত বাঙালিরা। এক সময় এই বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে আনতে পাহাড়ে বাড়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপস্থিতি। শান্তিবাহিনীর হাতে অসংখ্য বাঙালির প্রাণ হারানোর ঘটনায় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাহাড়িদের ওপর ক্ষুব্ধ বাঙালিদের হামলার ঘটনাও বাড়তে থাকে। ক্রমশ নষ্ট হতে শুরু করে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি-বাঙালির সম্পর্ক। এসব আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলো পুনর্বাসিত বাঙালি গ্রাম, সেনাবাহিনী-পুলিশ-আনসার সদস্যরা।
শান্তিবাহিনীর হামলায় ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ঠিক কতজন বাঙালি কিংবা নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মারা গেছেন তার সঠিক কোনো সংখ্যা প্রকাশিত না হলেও বিভিন্ন গবেষকরা এই সংখ্যাকে অন্তত দশ হাজার বলে দাবি করে থাকেন। তবে দুটি ক্ষেত্রেই কোন বিশ্বস্ত কিংবা দায়িত্বশীল সূত্র পাওয়া সম্ভব হয়নি।
১৯৮০ সালে সন্তু লারমা ছাড়া পান এবং ১৯৮১ সালে আবারও গ্রেফতার হন কিন্তু এবার ছাড়া পেয়ে আত্মগোপনে চলে যান। ১৯৮২ সালে দলীয় কোন্দলে নিহত হন এমএন লারমা।
১৯৯৯ সালে জনসংহতি সমিতির ষষ্ঠ মহাসম্মেলনে জেএসএস এর সামরিক শাখা শান্তিবাহিনীর আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বন্ধ হয়নি শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসী তৎপরতা। এর সর্ব শেষ শিকার বান্দরবানের নওমুসলিম ওমর ফারুক ত্রিপুরা।
আমরা জেনেছি, বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে ওমর ফারুক নামে এক নওমুসলিমকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গত ১৮ই জুন, শুক্রবার আনুমানিক রাত ৯টার দিকে নামাজ আদায় করে বাড়ি ফেরার পথে রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের তুলাছড়ি পাড়া এলাকায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ তাকে হত্যা করেছে।
‘নও মুসলিম ওমর ফারুক (পূর্ব নাম পূর্ণেন্দু ত্রিপুরা) বন্ধুর দাওয়াতে ২০১৪ সালে খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার অত্যন্ত দুর্গম পার্বত্য এলাকায তুলাছড়িতে নিজের জমিতে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম ধর্ম চর্চা করতে শুরু করেন। শুধু তাই নয় রোয়াংছড়ির ওই চরম বৈরী পরিবেশে তিনি অন্যান্য বিধর্মীদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করেন। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা একের পর এক তাকে হত্যা করার হুমকি দিতে থাকে। কিন্তু ওমর ফারুক জীবনের তোয়াক্কা না করে ইসলামের প্রচার অব্যাহত রাখেন। তার এই প্রচেষ্টায় শুধু নিজের পরিবার নয়, রোয়াংছড়ি এলাকায় তার দাওয়াতে ৩০টি উপজাতীয় পরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। একারণে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা তাকে থামাতে গত কয়েকদিন আগে রাতে মসজিদ থেকে এশার নামাজ পড়ে ফেরার পথে গুলি করে হত্যা করে।
পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইসলাম গ্রহণ করায় সন্তু লারমার জেএসএসের সশস্ত্র শাখার লোকজন তাকে হুমকি দিয়ে আসছিল। এলাকাবাসী জানিয়েছে, সন্তু লারমার সন্ত্রাসী বাহিনিই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত।
সুতরাং,সময় থাকতে ব্যবস্থা নিন।
অন্যথায় ওই অঞ্চল বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। দেশি--বিদেশি চক্রান্তে প্রতিষ্ঠা করা হবে জুম্মল্যান্ড! এর উদ্দেশ্য, বাংলাদেশ নামক মুসলিম ভূখণ্ডকে দুর্বল করে দিয়ে গ্রেটার ভারত প্রতিষ্ঠার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া! আর জেনে রাখা দরকার, এই পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর ইউরেনিয়াম আছে, যা দিয়ে পারমানবিক বোমা বানানো যায়। আছে প্রচুর বনজ ও খনিজ সম্পদ। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের কুনজর কিন্তু এই অঞ্চলে। সুতরাং সচেতন হোন। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সন্ত্রাসী বাহিনির নিরস্ত্রীকরণের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নিন। যদি তারা অস্ত্র না ছাড়ে, তবে অস্ত্রের ভাষায়ই কথা বলুক দেশের সেনাবাহিনী। নিরস্ত্র সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার জন্যই এই সন্ত্রাসী বাহিনীর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিন।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন