- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
২০ বছর লড়াই করে আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিচ্ছে মার্কিন স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর সেনারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড, তুরস্ক, জার্মানি, ইতালি, পর্তুগাল ইত্যাদি ৩৬টি দেশ আমেরিকার পক্ষ নিয়ে আফগানিস্তানে ২০ বছরব্যাপী এই লড়াইতে অংশ নিয়েছিল। তালিবানের কাছে পরাজিত হয়ে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র দেশগুলোর সেনাবাহিনীসহ একরকম পালিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান থেকে। অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র ও বিমানবাহিনীসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালিয়েছিল আফগানিস্তানে। এক সময় তাদের সৈন্য সংখ্যা আফগানিস্তানে ১ লক্ষ ২০ হাজারে দাঁড়িয়েছিল। সেইসাথে ব্রিটেন সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোও সেনা ও বিমান বহর পাঠিয়েছিল কাবুলে। মার্কিন আক্রমণে আফগানিস্তানে ক্ষমতাসীন তালিবান সরকারকে পিছু হটে রাজধানী কাবুল ছাড়তে হয়েছিল। কিন্তু মোল্লা ওমর এর সরকার হটে এলেও কখনোই ময়দান ছাড়েনি। পৃথিবীর সর্বাধুনিক মারণাস্ত্র, বিমান বহর, ক্ষেপণাস্ত্র এমনকি পরমাণু বোমার পর সব থেকে শক্তিশালী বোমা ‘মাদার অফ দ্য বম্বস’ ব্যবহার করেও আফগান যোদ্ধাদের হটাতে পারেনি পৃথিবীর সব থেকে শক্তিশালী জোট সেনারা।
আফগানিস্তানে বিদেশী সেনারা বহু জায়গায় গণহত্যাও করেছে। কখনো বলেছে ভুল হয়েছে। আবার কখনো তাদের বয়ান ছিল– এই হত্যাযজ্ঞের প্রয়োজন ছিল। কারণ– আশপাশে নাকি তালিবান সেনারা অপেক্ষা করছিল। কিছু দিন আগে অস্ট্রেলিয়ান সেনারা শুধুমাত্র মজা পাওয়ার জন্য ৩৯ জন আফগান বেসামরিক ব্যক্তিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর তারা লাশগুলোর উপর কিছু আধুনিক অস্ত্র রেখে দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করে– লড়াইয়ের ফলে নাকি এরা নিহত হয়েছে। কিন্তু এই গল্প ধোপে টেকেনি। দেখা গেছে– মার্কিন সেনা ও মিত্র বাহিনী এই ধরনের অসংখ্য গণহত্যা ঘটিয়েছে বেসামরিক মানুষদের উপর।
অবশ্য পরিবর্তে গানিব্যাগে পুরে ৪০০০ ও বেশি মার্কিন সেনাদের লাশ ফিরে গেছে ওয়াশিংটন ও নিউ ইয়র্কে। এ ছাড়া আহত প্রায় ২১ হাজার সেনাকে বিমানে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশে নিয়ে গেছে চিকিৎসার জন্য। এই আহত সেনাদের এখন শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ লক্ষ ডলার ব্যয় হচ্ছে। পঙ্গু সেনাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে বিশেষ ভাতা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হয়েছে।
তালিবান সরকারকে সরিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান দখল করেছিল। কিন্তু ‘বিশ সাল বাদ’ এত ক্ষয়ক্ষতির পর সেই তালিবানের হাতেই ক্ষমতা সমর্পণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপমানজনক বিদায় নিতে হচ্ছে কাবুল থেকে। তাদের মিশন তো পুরো হয়নি– বরং অবস্থা যেখানে ছিল তা অপরিবর্তিত রেখেই পাততাড়ি গোটাচ্ছে মার্কিন ও ন্যাটোর সেনা।
কারণ– তালিবান সদ্য ঘোষণা করেছে– আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশ এলাকা এখন তাদের দখলে। এ ছাড়া ইরানের কাছে বেশ কয়েকটি সীমান্ত চৌকিও তালিবান দখলে নিয়েছে। এই এলাকাটির নাম ইসলাম ক্বালা। আফগানিস্তানের এই সীমান্ত এলাকাটি ইরান থেকে শুরু করে চীন পর্যন্ত বিস্তৃত এবং ভৌগোলিক দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাবুলে প্রতিষ্ঠিত আফগান সরকারের মুখপাত্ররা তালিবানের এই দাবি স্বীকার করে নিয়েছে। তবে করুণ কণ্ঠে বলেছে– আমরা তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করব। আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তারেক আরিয়ান বলেছেন– বর্তমানে যা অবস্থা তাতে এটা কখনই সম্ভব হবে না যে– কাবুলের সরকার পুরো আফগানিস্তানের উপর কর্তৃত্ব করবে। অন্যদিকে– মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত কাবুল সরকারের হতাশার আর একটি কারণ হচ্ছে– তাদের দোস্ত ও প্রভু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন– মার্কিন সেনাবাহিনী এ বছর ৩১ আগস্টের মধ্যেই তাদের সব সেনা আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করে নেবে। তিনি অবশ্য বলেছেন– ২০ বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রেরণ ও যুদ্ধ তার অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণ করেছে। তবে তিনি এটাও স্বীকার করেছেন– কাবুল সরকারের পক্ষে আফগানিস্তানকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। কিন্তু দুঃখের কথা হচ্ছে– কাবুল সরকারকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর সাহায্য করার হিম্মত দেখাবে না। বাইডেন সাফ বলে দিয়েছেন– তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়া একটি প্রজন্মকে আর কখনোই আফগান যুদ্ধে পাঠাবেন না। বর্তমানে অবস্থা হচ্ছে– তালিবান উত্তর আফগানিস্তানে বেশিরভাগ জায়গা থেকে কাবুলের আফগান সেনাকে হটিয়ে দিয়েছে। আর কাবুল সরকার কোনওক্রমে প্রাদেশিক রাজধানীগুলোকে এখনো ধরে রেখেছে। তবে তাদের খাবার ও গোলা বারুদের জন্য বিমানবাহিনীর উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন